মোশারফ হোসাইন তযু-নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে একজন অন্ধ ব্যক্তির দুর্ভাগ্য বর্ণনা করা অসম্ভব। একজন অন্ধ কিংবা দৃষ্টিহীন ব্যক্তিই কেবল বুঝতে পারে তার যন্ত্রণা কী! চোখে নেই আলোর ছটা। কেবল মনের আলোয় জীবনের জয়কে হাতের মুঠোয় নিতে চাইছেন শ্রীপুরের নাসিমা।
প্রতিটি ক্ষেত্রে অবর্ণনীয় কষ্ট এবং অসুবিধার স্বীকার নাসিমার জীবনে একরাশ আলোর সুবাতাসের আশায় শ্রুতিলেখকের সহায়তায় শ্রীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
জানা যায়, অদম্য মেধাবী দৃষ্টিহীন নাসিমা আক্তার। প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র সার্টিফিকেট এবং সবশেষ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। উচ্চ শিক্ষার আশায় শ্রীপুর উপজেলার পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এ পরীক্ষার্থী প্রশ্নপত্রের উত্তর মুখে বলে শ্রুতিলেখককে শোনান এবং শ্রুতিলেখক সেটি লিখে আবার তাকে পড়ে শোনান। এ কারণে তার জন্য তিন ঘণ্টার অতিরিক্ত ২০ মিনিট বেশি সময় বরাদ্দ করা হয়েছে।
নাসিমা শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিংদীঘি গ্রামের বারেক মিয়ার মেয়ে। তারা এক ভাই ও দুই বোন। বাবা একসময় কৃষি কাজ করলেও এখন আর কাজ করতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লেখা করাচ্ছেন। নাসিমার ভর্তির পর তাকে কলেজের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন শিক্ষকসহ কলেজ কর্তৃপক্ষ। সহপাঠীরা নাসিমাকে বাড়ি থেকে কলেজে আনা নেয়ায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন বলে জানা যায়।
পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আবুল খায়ের জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাসিমাকে আমাদের শিক্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে লেখা-পড়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সে ভালো ফলাফল করবে। নাসিমা লেখাপড়া করে আইনজীবী পেশাকে বেছে নিতে চান বলে তিনি জানান।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আকতার বলেন, নাসিমা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার একটি উদাহরণ। সে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাঠদানে অংশ নিয়েছে। যদিও তার জন্য আলাদা শিক্ষা পদ্ধতি ছিল। তার অদম্য ইচ্ছার কারণে সে লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে। আমি তাঁর সফলতা কামনা করছি।