মোশারফ হোসাইন তযু -নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষুধার্ত পেট, শূণ্য থালা, চলাচলের জন্য তিন চাকার একটি বেরিং গাড়ি নিয়ে কাঠফাটা রোদ ও বৃষ্টিতেও প্রতিদিনই বাজারে বাজারে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয় তার। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীর মুখে অন্ন তুলে দিতে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছেন তিনি।

জন্মের পনের মাস পর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি বাঁকা হয়ে অবশ হয়ে যায়। অভাব-অনটনের সংসারে তার ঘরে রয়েছে চার মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী। এতো বড় সংসারের এক মাত্র ভরসা তিনিই।
এতো বড় সংসার চালাতে উপার্জনের সহজ পথ হিসেবে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি ।
সকাল থেকে সন্ধ্যা-রাত পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তি করে যা আয় হয় তা দিয়েই খেয়ে-না খেয়ে চলে তার সংসার। এতো অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়ে-ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তার নাম দুলু মিয়া (৬০)। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কালাদাহ ইউনিয়নের বড়িরা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
সম্প্রতি দুলু মিয়ার অসহ্য-যন্ত্রণায় জীবন পার করছে, এ নিয়ে সাংবাদিক মোশারফ হোসাইন তযু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে অনল দ্রোহী নামের একটি গ্রুপের প্রবাসী জোবায়ের ও বিজ্ঞানী রফিকুল ইসলামসহ কিছু হৃদয়বান ব্যাক্তি দুলু মিয়ার পাশে দাঁড়ান। বাড়িয়ে দেন সহায়তার হাত।

এ প্রতিবেদকের সাথে গত ২৪ আগষ্ট সকালে ময়মনসিংহের উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের কালাদহ গ্রামে দেখা হয়। সেদিন তার চাওয়া ছিল কেউ যেন তাকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেন। একটি হুইল চেয়ার হলে ভাগ্যের কিছুটা হলেও চাকা ঘুরবে। সহজ হবে পথচলা।
তার স্বপ্ন পূরণ করতে সাথে ছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুরের হৃদয়বান ও স্বপ্নবাজ কিছু মানুষ। তাদের নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে দুলু মিয়ার বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। যাওয়ার পথে ভালুকা বাজারে গাড়ি থামিয়ে দশটা দেখে ভালো মানের একটি হুইল চেয়ার কিনে নিলাম। এর আগে মাওনা চৌরাস্তা থেকে দুলু মিয়াসহ পরিবারের জন্য করে নিলাম শপিং। বিকেল ৩টায় আমরা দুলু মিয়ার বাড়িতে পৌছি। এসময় আমাদের সাথে যুক্ত হন কালাদহ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মাস্টারসহ স্থানীয়রা।
এসময় তার স্বপ্নের হুইল চেয়ারটি দেখা মাত্রই আবেগে আপ্লুত হয়ে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলেন এসময় তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৬০ বছর পর জীবনের চাকা একটু হলেও ঘুরবে! তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত আমরা টের পেলাম হুইল চেয়ার পেয়ে এতদিনের দুঃখ যেন দৌড়ে পালিয়েছে দুলু মিয়ার জীবন থেকে।

হুইল চেয়ার প্রদানের সময় স্থানীয়রা বলেন, এতো সহজেই আমাদের পাশের অসহায় মানুষদের খুশি করার মানুষ সত্যিই সমাজে এখনও আছেন ! অসহায় ভিক্ষুক দুলু মিয়াকে যারা সহযোগিতা করেছে আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক।
দুলু মিয়ার নিজ বাড়িতে হুইল চেয়ারটি প্রদান করার সময় উপস্থিত ছিলেন, কালাদহ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মাস্টার, সাংবাদিক ও আয়োজক মোশারফ হোসাইন তযু, প্রভাষক নূরে আলম ছিদ্দিকী, সাহিত্যিক রুহুল কবীর সুজন, ডা: শফিকুল ইসলাম, এ্যাড. নাজনীন জাহান মুন্নী, বিজ্ঞানী দরদী রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক শেখ মো.জসিমসহ স্থানীয়রা।
এসময় ইউপি চেয়ারম্যান কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দুলু মিয়ার ছেলে- মেয়েদের লেখা-পড়ার বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।