মোশারফ হোসাইন তযু-নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরনো একটি মাটির ঘর তার উপর টিনের ছাউনি। ভেতর থেকে আকাশ দেখা যায়! আর বৃষ্টির পানি সেতো চোখেই পরে। আদরের তিন কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে অন্যের দেয়া ওই ঘরে বসবাস করতেন আ: আজিজ। বহুবার চেষ্টা করেছেন পুরনো টিনের ছাউনি পরিবর্তন করার জন্য। দিনমজুরী আজিজের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। আজিজ ও তার স্ত্রী নছিমনের আতঙ্কের নাম ছিল বৃষ্টি। এমন চরম দু:সময়ের মধ্যে তিন বছর আগে আ: আজিজ চলে যান না ফেরার দেশে। টিনের ছাউনি আর পরিবর্তন করা হলনা নছিমন বিবির।
নছিমন বিবি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ভুতুলিয়া গ্রামে তিন কন্যা সন্তান নিয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলছেন। যুদ্ধ করছেন বৃষ্টির সাথেও। যখনি বৃষ্টি হয় ভিজতে হয় তাদের। ঘরের ভেতর জমে থাকে পানি। নছিমন বিবির এমন চরম দু:সময়ে এগিয়ে আসলেন শ্রীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রীণ বাংলা ষ্টুডেন্ট ক্লাব নামের একটি সংগঠন। সংঘঠনটির একঝাক তরুণ নছিমনের পুরনো ঘরের পুরনো টিন পরিবর্তন করে নছিমন বিবি ও তার তিন কন্যার কষ্টের মুখে হাঁসি ফুটানোর মাধ্যমে আবারও প্রমান করে দিলেন মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।
গ্রীণ বাংলা স্টুডেন্ট ক্লাবের সভাপতি গোলাম রাব্বী জানায়, আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে বস্ত্র বিতরণের সময় নছিমন বিবির সাথে পরিচয় হয়। তখন তিনি তার তিন সন্তান ও পুরনো ঘরটির কথা এবং তার দু:খ দূর্দশার কথা বলতে থাকলে আমার হৃদয়ের বিবেক নাড়া দেয়। পরে নছিমনের বাড়িতে যাই ঘরের ভেতর গিয়ে দেখি ঘরের টিনগুলি পুরনো হয়ে জুড় জুড়া হয়ে গেছে। সেদিনও বৃষ্টি ছিলো, ঘরের ভেতর কাঁদা দেখে এক পর্যায়ে আমি হাঁউ-মাঁউ করে কেদেঁই ফেললাম। নিজেকে প্রশ্নও করলাম মানুষ এখনো এতো কষ্টে থাকে? পরে এলাবাসীর সহযোগিতায় এবং আমাদের সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গ্রীণ বাংলা স্টুডেন্ট ক্লাবের আর্থিক সহযোগিতায় দুই মাস পর নছিমনের পুরনো টিনের ছাউনি পরিবর্তন করে নতুন টিন দিয়ে ছাউনি করে দেয়া হয়েছে। এতে নছিমন বিবি ও তার তিন কন্যা সুমি, রুমি ও চার বছরের উর্মির মুখে হাসি ফুঁটেছে।
বিশ বছর পর মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে নছিমন বিবি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমাগো টাকা পয়সা না থাকার কারণে এতো বছরেও ঘরের টিন পরিবর্তন করা পারছিনা। সেই কত বছর আগে এহানকার ভালা মানুষগুলো আমাদের জায়গা ও মাটির ঘর বানাইয়া দিছিল। টিন গুলো পুরনো হয়ে জুড় জুড়া হয়ে গেছিলো, বৃষ্টিতে ঘরে থাকতে পারিনি। এখন আমার তিন সন্তান নিয়ে বৃষ্টিতে আর ভিজতে হইবো না । আমার খুব ভালো লাগতেছে। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক। তারা যেন এমনি ভাবে অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে পারে আমি দোয়া করি।